শিখর ধওয়ানের ব্যাট হাতে গব্বর হয়ে ওঠা, রোহিতের দায়িত্বশীল ব্যাটিং, হার্দিকের ক্যামিও, চহ্বালের সঠিক সময় জুটি ভাঙ্গা স্পিন এবং ভুবনেশ্বর ও বুমরার আগ্রাসী উইকেট নেওয়ার ক্ষমতার উপর ভর করে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় জয় ছিনিয়ে নিল বিরাট কোহলির ভারত। এই ওভালেই ২০ বছর আগে জাভাগাল শ্রীনাথের অসামান্য বোলিং-এর সাক্ষী থেকে ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। মার্ক ওয়ের চওড়া ব্যাটে ভর করে ২৮২ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাকগ্রাথের নিখুঁত মাপা বোলিং ভারতের ব্যাটিং স্তম্ভদের প্যাভিলিয়ানের ফেরত পাঠানোর পরে অজয় জাদেজা এবং রবিন সিংহ-এর ব্যাট প্রতিরোধ গড়ে তুললেও ৭৬ রানের হার স্বীকার করতে হয়েছিল ভারতকে।
বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারত–অস্ট্রেলিয়া দ্বৈরথে পরিসংখ্যানের নিরিখে অজি বাহিনী অনেক এগিয়ে। কালকের ম্যাচে পরাজিত হলেও বিশ্বকাপে এই দুই দলের মুখোমুখি প্রতিযোগিতায় মোট ১২টি ম্যাচের মধ্যে ভারত জিতেছে মোটে ৪টিতে; বাকি ৮টি ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে অস্ট্রেলিয়া। এর মধ্যে ১৯৯৬-এ মার্ক ওয়ের ব্যাট ও বলে ভেল্কি; ২০০৩-এ গ্রুপ ম্যাচে ম্যাকগ্রাথ, গিলেসপি আর ব্রেট লি-র কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ; ২০০৩-এ ফাইনালের সেই দুঃস্বপ্ন; ২০১৫ তে মাহেন্দ্রক্ষণে সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গিয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনির কান্না সবই আছে। তাই গতকালের ম্যাচ ছিল অতীত ভুলে গিয়ে বর্তমানকে মনে রেখে পরিকল্পনা ও কৌশলগুলিকে সঠিকভাবে সময় সময় সম্পাদিত করা।
প্রথমে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত এবং শুরুর থেকেই সাবধানী ছিলেন রোহিত-শিখর জুটি। আগের ম্যাচে শতরানকারী রোহিত একটু দেখে খেলছিলেন; বরঞ্চ তুলনায় শিখর ছিলেন আগ্রাসী। ওপেনিং জুটি ভারতকে ১০০ এর সীমানা পার করে দেয় এবং ১২৭ রানে ভারত প্রথম উইকেট হারায়, যখন রোহিত নিলের বলে উইকেট কিপার ক্যারির হাতে তালুবন্দি হন। এরপর ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি সাবলীল ভঙ্গিতে তাঁর ইনিংস শুরু করেন এবং ভারতকে ২০০ পার করে দেয় শিখর-কোহলি জুটি। সুইং আদায়ে ব্যর্থ হন স্টার্ক, কামিংন্সরা। শিখর তার শতরান পূর্ণ করে দ্রুত রান সংগ্রহের তাগিদে ১১৭ রানে (১৬*৪) স্টার্কের বলে লিয়নের হাতে তালুবন্দি হন। এরপর হার্দিক, ধোনিরা যোগ্য সঙ্গত দেন ভারত অধিনায়ক কোহলিকে এবং কোহলির ৭৭ বলে ৮২ (৪*৪, ২*৬), পান্ডিয়ার ২৭ বলে ৪৮ (৪*৪, ৩*৬) এবং ধোনির ১৪ বলে ২৭ এর দৌলতে ৫ উইকেটে ৩৫২ রান তোলে ভারত নির্ধারিত ৫০ ওভারে।
ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের সেই ১৬ বছর আগের সেই নিষ্ঠুর স্মৃতির কথা মনে পড়ে। সেই জোহানার্সবাগের ফাইনাল; রিকি পন্টিং, মার্টিনদের ভারতীয় বোলিংকে নিয়ে ছেলে খেলা। পাহাড় সমান রান খাড়া করে প্রথম অর্ধেই ম্যাচ শেষ করে দেওয়া। ১৬ বছরে ক্রিকেট অনেক বদলেছে। কুড়ি-কুড়ির যুগে পাওয়ার হিটিং আলাদা মাত্রা পেয়েছে। এখন কোন রানই বড় নয়। বিশেষ করে যে দলে ম্যাক্সয়েল, ওয়ার্নারের মত ব্যাটসম্যানরা আছেন। কিন্তু গতকাল রান তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়াকে কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে দেয় নি ভারতের বোলিং। শুরুর ওভারের ছন্দবদ্ধ বোলিং-এর সামনে অজিরা তেমন আগ্রাসীভাবে শুরু করতে পারে নি। এরপর রান রেটের চাপে নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারাতে থাকে অস্ট্রেলিয়া।
৩৬ রানে ম্যাচ হারলেও কখনো মনে হচ্ছিল ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে যাবে। বল বিকৃতির দায়ে নির্বাসিত হওয়া ক্রিকেটার ডেভিড ওয়ার্নার ৫৬ রান করলেও ৮৪ বল খেলে ফেলেন এবং প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মন্থর খেলে ভারতের কাজ সহজ করে দেন। স্মিথ করেন ৬৯ রান এবং উসমান খোয়াজা ৪২ রান। ভারতের পক্ষে ৩ টি করে উইকেট নেন বুমরা ও ভুবনেশ্বর কুমার। জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে আসা চহ্বাল নেন দুটি উইকেট। অস্ট্রেলিয়া উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান ক্যারির ঝোড়ো ব্যাটিং-এ ৫৫ রান দলকে ৩০০-র গণ্ডি পার করিয়ে ২০ বছর আগেকার আরেক অসহায় বাঁ হাতি ল্যান্স ক্লুজনারের স্মৃতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও ৩৬ রানে অজিদের হার বাঁচাতে পারেন নি।
এই ম্যাচে জিতে ভারত দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে টেবিল তালিকায় তৃতীয় স্থানে চলে গেল এবং অস্ট্রেলিয়া থাকলো চতুর্থ স্থানে। ভারতের পরবর্তী ম্যাচ আগামী বৃহস্পতিবার তালিকার শীর্ষে থাকা নিউজিল্যান্ডের সাথে এবং অস্ট্রেলিয়ার পরবর্তী ম্যাচ পাকিস্তানের সাথে।
Yorumlar