সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা বেড়েই চলেছে। বৃদ্ধি পাছে গণপ্রহারে নিরীহ মানুষের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যাও। সম্প্রতি সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে গণপিটুনিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক হত্যার ঘটনা মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডে ঘটেছে। দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, উন্মাদ জনতা ৪৫ জন নির্দোষ লোককে হত্যা করেছে। ২৮৫ জন নির্দোষ লোককে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে, যার মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৫০ শতাংশ নিরীহ লোক সামিল। এই অবস্থায় মানবাধিকার সংগঠন ‘ইউনাইটেড এগেইনস্ট হেইট’ সোমবার দিল্লির প্রেস ক্লাবে একটি টোল ফ্রি হেল্পলাইন নম্বর (১৮০০-৩১৩৩-৬০০০০) চালু করল। এই উদ্যোগটির উদ্দেশ্য হল, যাতে আদালতের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থদের দ্রুত ও পূর্ণ বিচারের ব্যবস্থা করা যায়। এছাড়াও ঘৃণ্য অপরাধ এবং হিংসার হাত থেকে সাধারন মানুষকে বাঁচানো যায়।
হেল্পলাইন সার্ভিসের পরিচয় দিতে গিয়ে ইউনাইটেড এগেইনস্ট হেইট-এর আহ্বায়ক নাদিম খান বলেন,
“আমরা জনসাধারণের উপর ঘৃণামূলক অপরাধগুলির ক্রমবর্ধমান মামলাগুলির শিকার হওয়া মানু্ষদের সাহায্যে একটি টোল ফ্রি হেল্পলাইন চালু করছি। আদালতে ন্যায়বিচার পেতে আমরা এই ধরনের হামলার শিকারদের সাহায্য করার চেষ্টা করব।”
“ঘৃণামূলক অপরাধের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টারের লক্ষ্য হচ্ছে দ্রুত বিচার পেতে ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সাহায্য করা – সরাসরি প্রচার মাধ্যমের ঘটনাগুলি রিপোর্ট করা, এবং ঘটনাগুলি নথিভুক্ত করা। এতে চারটি উদ্দেশ্যে রয়েছে- দ্রুত প্রতিক্রিয়া, নথিভূক্তিকরণ, আইনী সহায়তা এবং আইনী সওয়াল।“
ঝাড়খন্ডের সেরাইকেলা-খারসওয়ান জেলার ২৪ বছর বয়সী যুবক তাবরেজ আনসারীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দুই সপ্তাহ পর এই হেল্পলাইন কেন্দ্রটি চালু করা হয়েছে। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, সামাজিক কর্মী, শিক্ষাবিদ এবং সিনিয়র সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপুর্বানন্দ বলেন
“আমরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাম্প্রদায়িক হিংসার খবর পাচ্ছি কিন্তু পুলিশ সর্বদা এই যেটি ঘৃণাজনক অপরাধের বিষয়গুলি গোপন করার চেষ্টা করেছে, যেমন তারা বলেছিল যে জুনায়েদের গণপিটুনীর ঘটনাটির কোন সাম্প্রদায়িক আঙ্গিক ছিল না। সুতরাং এই হেল্পলাইন ব্যবহার করার এখন একটি প্রয়োজনীয়তা হয়ে উঠেছে। মুসলিম, খ্রিস্টান ও দলিতদের শুধুমাত্র তাদের পরিচয়ের কারণে আক্রমণ করা হচ্ছে।“
প্রফেসর রতন লাল বলেন
“এটি কেবল একটি সূচনা এবং আমাদের সকল শক্তি দিয়ে এই লড়াই করতে হবে, কারণ এই ঘটনাগুলি বেড়েই চলেছে।“
এদিকে অ্যাডভোকেট এহতেশাম হাশিমী বলেন
“এই হেল্পলাইনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কিভাবে এফআইআর দাখিল করা যায়, কিভাবে ন্যায়বিচারের জন্য লড়ায় করা যায় এবং সেশন কোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করা যায়। আমাদের প্রধান কাজ আইনী বিশেষজ্ঞদের একটি দল প্রস্তুত করা যাতে গরিবদের জন্য উপযুক্ত আইনী সহায়তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।“
Comments