top of page

সিলিকোসিস - এক মহামারীর উৎস ও প্রতিকারের সন্ধানে গণকনভেনশন



বাড়িতে কাঁচের তৈরী গ্লাস, বাটি বা কাঁচের অন্যান্য জিনিস আছে?

ঘরের মেঝে মোজাইক করা? মেঝেতে মার্বেল কিংবা টাইলস্ পাতা আছে?

আছে কি নানান ধাতব গয়না?

কিংবা নিদেনপক্ষে চিনামাটির কাপ প্লেট তো থাকবেই!


হুম্, খুব পরিচিত এই জিনিসগুলো আমাদের কাছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহার্য। এতটাই পরিচিত এই বস্তুগুলো যে হঠাৎ এই জিনিসগুলো আছে কিনা জিজ্ঞেস করাটাই বাতুলতা বোধ করছেন হয়তো অনেকে! জিনিসগুলো তো খুব পরিচিত; কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কি, যে মানুষগুলোর শ্রম এই জিনিসগুলো তৈরী করেছে, তারা আমার আপনার আদৌ পরিচিত কি না?


আজ্ঞে না। আদৌ পরিচিত নই আমরা তাদের সাথে। না তাদের সাথে পরিচিত, না সেই ভয়ঙ্কর মারণ ব্যাধির সাথে পরিচিত যা তাদের শ্বাসের সাথে মিশে গেছে! সভ্যতার অভিশাপ বুক পেতে নিচ্ছে তারা। সে অভিশাপের নাম, 'সিলিকোসিস'!


সিলিকোসিস রোগটি পাথর ভাঙার কাজ, চিনামাটির শিল্প, কাঁচ শিল্প কিংবা অলংকার শিল্পের সাথে যুক্ত শ্রমিকদের হয়ে থাকে। যেসব শ্রমিক পাথর ক্রাশিং মিলে কাজ করেন, পাথর ক্রাশিংয়ের সময় ধূলা-বালু শ্রমিকদের নাক-মুখে প্রবেশ করে। তারপর ধীরে ধীরে ওই সব শ্রমিকদের অনেকেই সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হন। এই রোগে ফুসফুস বিকল হয় এবং বিফল হয়। কাশি হয় ক্রমাগত, মুখ দিয়ে রক্ত পড়ে। সমস্ত শরীর দ্রুত ক্ষয়ে যায়। তেইশ চব্বিশ বছরের শক্ত সবল জোয়ান ছেলেও, বিরাট পৃথিবীর এক আকাশ বাতাস থেকে অক্সিজেন টেনে নেবার ক্ষমতা হারিয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরতে খুব বেশি সময় নেয়না। সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বেশীদিন বাঁচেন না। আর এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা ব্যয়বহুল।


ভারতবর্ষে এই রোগে আক্রান্তদের সংখ্যাটা এক কোটি এবং আরো এক কোটি কর্মরত শ্রমিক আক্রান্ত হবার অপেক্ষায়! আর এই দু' কোটি শ্রমিকের পরিবারের সদস্য যারা কর্মরত শ্রমিকদের আয়ের উপরেই নির্ভরশীল, সে সংখ্যাটা মিলিয়ে নিলে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ এই ভয়ানক অসুখের দ্বারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আক্রান্ত। অথচ শ্রমিক সুরক্ষা নিয়ে রাষ্ট্রের সরকারের কোনও হেলদোল নেই। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এই অসুখ এড়িয়ে চলা সম্ভব। কিন্তু শ্রমিকদের সেই সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে সরকার এবং মালিকপক্ষ কারোরই কোনও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেই। পাঁচ কোটি মানুষের বর্তমান ভবিষ্যৎ অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু রাষ্ট্রের সে দিকে এতটুকু ভ্রূক্ষেপ নেই। ভ্রূক্ষেপ নেই খাদানগুলির থেকে হাজার-কোটি টাকা মুনাফা লোটা মালিকদেরও! অসুস্থ শ্রমিকদের, তাদের পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদন কিভাবে চলছে বা আদৌ চলছে কিনা, ঠান্ডা ঘরে নরম গদিতে বসা মালিকের তাতে কী বা এসে যায়?


সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হল এই যে, সিলিকোসিস অসুখ হয়েছে প্রমাণ হলে শ্রমিককে সমস্ত রকমের সাহায্য করতে বাধ্য থাকে মালিক, যেহেতু এটি পেশাগত রোগ। আর সেই দায় এড়াতে, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে অনেক সময়ই দেখা যায় সিলিকোসিসের বদলে লেখা আছে যে অসুস্থ ব্যক্তির নাকি টি.বি. হয়েছে। এমনকি অসুখটা সিলিকোসিস হলেও ওষুধ দেওয়া হয় টিবিরই! ফলে যা হবার তাই হচ্ছে! একের পর এক শ্রমিক কাশতে কাশতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে, মুখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে কালচে রক্ত! না না, ভয় পাবেন না, আমার আপনার শখের ফুলদানিতে, চায়ের কাপে কিংবা ঝকঝকে সাদা মেঝেতে সে রক্ত লেগে নেই! কিংবা ... আছে কি?


এ এক অসম যুদ্ধে নেমেছি আমরা ... প্রবল রাষ্ট্র শক্তি, মালিক শ্রেণীর লুটে খাওয়া, পিষে খাওয়ার নির্মম সিস্টেমের বিরুদ্ধে শ্রমিকের এই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। হিন্দু-মুসলমান-খ্রীষ্টানদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, কিন্তু আছে পাথর খাদান বা এই জাতীয় স্থানে কাজ করা শ্রমিকদেরI এমনকি নির্মাণ শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি, জোগাড়ে, গাড়ির ড্রাইভার, রাস্তা পরিষ্কার করেন যে ঝাড়ুদার, পেট্রল পাম্পের কর্মী, রঙের কাজ করেন যে শ্রমিক, তিনিও আক্রান্ত হতে পারেন এই মারণরোগেI সবক্ষেত্রেই তাদের জীবিকার যোগ থাকে, অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণ ভাবে একটি পেশাগত রোগI যা আজ মহামারীর আকার নিচ্ছে।


আর তাই আপনারা সাথে থাকুন আগামীকাল ১৫ই জুলাই, ২০১৯ (সোমবার) বিকেল চারটেয় সিলিকোসিস - এক মহামারীর উৎস ও প্রতিকারের সন্ধানে গণকনভেনশনে, যে কনভেনশন খুলে দিতে পারে এক নতুন দিগন্ত। শুধু সিলিকোসিস নয়; সমস্ত পেশাগত রোগে হত শ্রমিকদের পক্ষে দাঁড়িয়ে আগামীকাল আমাদের শপথ নেওয়ার দিন যে মানুষের অধিকার রক্ষা করার জন্য আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালাবো। সরকার ও শাসককে মালিক নয়, মানুষের পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করব। এই লড়াইয়ের দাবী মাথায় নিয়ে সিলিকোসিস আক্রান্ত সংগ্রামী শ্রমিক কমিটি (SASSC), পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ, NTUI, AWBSRU, AITUC, AICCTU, CITU, TUCC, UTUC, IFTU, HSA, AHSD, PRC, শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ এবং মাতৃভুমি পত্রিকার আহ্বানে আগামীকাল কলকাতার কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল হলে আসুন আমি ও আপনি মিলিত হই শ্রমিকদের আহ্বান দিকে দিকে ছড়িয়ে দিতে।।

Comentarios


bottom of page